টিন সার্টিফিকেট কি? টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম

টিন সার্টিফিকেট! নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে কিংবা শখের গাড়ি কিনতে চাইলে এই সার্টিফিকেট লাগবেই! আর এই সার্টিফিকেট পাওয়া যায় আবেদন করার মাধ্যমে। 

আবেদনের ক্ষেত্রে লাগবে জাতীয় পত্র, বাসার ঠিকানা, জেলা, বিভাগসহ অন্যান্য সঠিক তথ্য। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাংক থেকে লোন কিংবা সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পেতেও দরকার পড়তে পারে এই টিন সার্টিফিকেট। 

সুতরাং বুঝতেই পারছেন প্রফেশনাল লাইফে একটা টিন সার্টিফিকেটের গুরুত্ব কতটা আমলে নেওয়ার মতো? আপনিও যদি এই গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট ঝামেলা ছাড়াই পেতে চান তবে জেনে নিন টিন নাম্বার কি কি কাজে লাগে, টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম কি এবং টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে সে-সম্পর্কে। 

টিন সার্টিফিকেট কি? 

শুরুতে চলুন জানা যাক টিন সার্টিফিকেট কি সে-সম্পর্কে। মূলত টিন সার্টিফিকেট হলো একটি ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার। যে নাম্বার কাজে লাগবে একজন করদাতার পরিচয়পত্রের মতো। 

এক্ষেত্রে কোনো ব্যাক্তি কখনোই ডুপ্লিকেট আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে তা ব্যবহার করতে পারবে না। যদি অন্যের টিন নাম্বার ব্যবহারও করে সেক্ষেত্রে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। 

তাছাড়া আজকাল টিন সার্টিফিকেট বানানোটাও অনেক সহজ। আয়কর নিবন্ধন ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে হবে। পরে সেই সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে অনায়াসেই ব্যবহার করা যাবে। 

বলে রাখা ভালো সাধারণত ২ ভাবে এই টিন সার্টিফিকেট করার সুযোগ আছে। কোনো ব্যাক্তি চাইলে নিজের নামে কিংবা নিজের কোম্পানির নামে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করিয়ে নিতে পারবে। 

তাছাড়া ডাউনলোড করা টিন সার্টিফিকেট বা নাম্বার কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে ওয়েবসাইট থেকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড বের করেও টিন নাম্বার বের করার সুযোগ রয়েছে। 

টিন নাম্বার কি কি কাজে লাগে? 

টিন সার্টিফিকেট কি সে-সম্পর্কে তো জানলেন। এবার চলুন জানি এই টিন নাম্বার কি কি কাজে লাগে সে-ব্যাপারে। মূলত একটি টিন নাম্বার দিয়ে আপনি যেসব কাজ করতে পারবেন সেসব কাজগুলি হলো: 

  • যারা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে চান তাদের আয়কর দেওয়ার আগে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট বা টিন নাম্বারের ব্যবস্থা করতে হবে
  • আপনি যদি নিজের বিজনেসের জন্য ট্রেড লাইসেন্স করতে চান বা তা নবায়ন করতে চান সেক্ষেত্রেও আপনাকে টিন নাম্বার যোগার করতে হবে
  • অনেকেই ব্যবসায়িক সমিতিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা ভোগ করে থাকেন এবং এসব সমিতিতে যোগ দেবার পূর্ব শর্ত হলো একটি টিন সার্টিফিকেট থাকা
  • আপনি যদি যেকোনো ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করাতে চান সেক্ষেত্রেও আপনার লাগবে একটি ইউনিক টিন সার্টিফিকেট
  • যদি কেউ ব্যাংক লোন এর আবেদন করতে চায় সেক্ষেত্রেও তার টিন সার্টিফিকেট বা টিন নাম্বার থাকতে হবে 
  • যারা সিটি করপোরেশন থেকে জমি কিনতে চান বিশেষ করে জমি, ভবন বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে চান তাদেরও টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে 

টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার যোগ্যতা 

টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে আলাদাভাবে যোগ্য হতে হবে৷ টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে নিচের বিষয়গুলি মাথায় রাখুন। 

মূলত টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার যেসব যোগ্যতা রয়েছে সেসব যোগ্যতা সেট করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে। তারা যেকোনো সময়ে আবার এসব যোগ্যতার মাপকাঠিতে পরিবর্তন আনতে পারে। 

সাধারণত টিন সার্টিফিকেট বানাতে হলে যোগ্যতা হিসাবে আপনার ১৬ হাজার টাকা ইনকামের একটি জব থাকতে হবে। বছরে একজন পুরুষ যদি ৩ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারে সেও টিন সার্টিফিকেট বানানোর জন্য আবেদন করতে পারবে। 

অন্যদিকে নারী এবং যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তাদের বাৎসরিক আয় হতে হবে সাড়ে ৩ লাখের মতো। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী যারা আছেন তাদের ইনকাম সাড়ে ৪ লাখ না হলে টিন সার্টিফিকেট বানাতে দিতে পারবেন না। 

মনে রাখবেন, টিন সার্টিফিকেট তারাই বানাবে যারা পরবর্তীতে আয়কর রিটার্ন জমা দেবে। যাদের ইনকাম আয়কর সীমার নিচে তাদের টিন সার্টিফিকেট লাগবে না এবং তারা টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে না। 

তবে হ্যাঁ! আপনি যদি কোনো ব্যবসায়িক সমিতি বা কমিটিতে যোগ দেন তাহলে উপরোক্ত হিসাব অনুযায়ী ইনকাম না থাকলেও আপনাকে টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে। 

টিন সার্টিফিকেট বানাতে কি কি লাগে?

টিন সার্টিফিকেট বানাতে আপনাকে বেশকিছু ডকুমেন্টস শো করাতে হবে। এসব ডকুমেন্টসে থাকা সঠিক তথ্যই ব্যবহৃত করা হবে আপনার টিন সার্টিফিকেটে। যারা ঘরে বসে কিংবা কম্পিউটার দোকানের সাহায্যে টিন সার্টিফিকেট বানাতে চান তাদের লাগবে: 

১. নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র 

২. একটি সচল মোবাইল নাম্বার 

৩. যিনি আবেদন করবেন তার পিতা ও মাতার নাম 

৪. যিনি আবেদন করবেন তার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা 

৫. কোম্পানীর ক্ষেত্রে একটি নিবন্ধন নাম্বার যার নাম RJSC বা আরজেএসসি

৬. লাগবে ডিজিটাল ফরম্যাটে সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি

RJSC বা আরজেএসসি কি? 

যারা RJSC বা আরজেএসসি নিয়ে কনফিউশনে আছেন তাদের বলে রাখি এটি মূলত যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের সংক্ষিপ্ত রূপ। 

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আপনি এই পরিদপ্তরের সাহায্যে কোম্পানি ও অন্যান্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারবেন। পরিদপ্তরটি বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠাসমূহের মালিকানা সম্পর্কিত বিভিন্ন ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে একটি নিবন্ধন নাম্বার প্রদান করে। 

মূলত যারা ব্যবসায়িক সমিতিতে যোগ দেবার জন্য বা কোনো বিজনেস শুরু করার জন্যে এই টিন সার্টিফিকেট বানাতে চাচ্ছেন তাদের অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট আবেদনের ক্ষেত্রে একটি ইউনিক RJSC বা আরজেএসসি নাম্বার প্রদান করতে হবে। 

টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম

টিন সার্টিফিকেট বানাতে কি কি যোগ্যতা লাগে বা কি কি ডকুমেন্টস লাগে সে-সম্পর্কে আলোচনার পর এখন আমরা সরাসরি টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো। টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করতে শুরুতে: 

  • বাংলাদেশের অফিসিয়াল আয়কর ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিন
  • একাউন্ট খুলতে একটি সার্কেল নাম্বার দিন
  • সেই সাথে আয়কর অঞ্চল, করদাতার নাম ঠিকানা সহ ব্যক্তিগত তথ্যাদি প্রদান করুন একেবারে সঠিকরূপে 
  • সবশেষে সকল তথ্য দিয়ে তৈরি করুন ইউজার আইডি 
  • মনে রাখবেন ইউজার আইডি তৈরি করার সময় অবশ্যই কমপক্ষে ৮ সংখ্যার একটি ইউজার নেইম দিতে হবে
  • এরপর সিকিউরিটির জন্য দিন কমপক্ষে ৪ সংখ্যার একটি মনে রাখার মতো পাসওয়ার্ড 
  • পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে সহজেই তা পেতে Security Question সিলেক্ট করে রাখুন
  • একটি সচল ইমেইল দিন 
  • এবার Register বাটনে ক্লিক করুন এবং কিছু সময় অপেক্ষা করুন
  • Activation কোড নাম্বারের জন্য অপেক্ষা করুন এবং তা পেলে একাউন্ট ভেরিফাই করে নিন
  • এবার একই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সরাসরি লগ ইন করে দেখুন
  • লগইন করলেই আপনি আপনার টিন সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন
টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে? 

আপাতত টিন সার্টিফিকেট করতে কোনো টাকা লাগছে না। তবে এক্ষেত্রে ট্যাক্স হিসাবে:

  • ঢাকা ও চট্টগ্রামে দিতে হবে ৫০০০ টাকা 
  • অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় দিতে হবে ৪০০০ টাকা 
  • সিটি করপোরেশন ব্যতীত এলাকায় দিতে হবে ৩০০০ টাকা  

টিন সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম

টিন সার্টিফিকেট সংশোধন করতে হলে ওয়েবসাইটে লগইন করে বামে থাকা মেনুগুলো থেকে “file transfer” অপশনে ক্লিক করুন। এর উপর যে সেকশন চেইঞ্জ করতে চান সেই সেকশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় সংশোধন সেরে নিতে পারবেন। যেমন ঠিকানা চেইঞ্জ করতে হলে ব্যবহার করতে হবে “change contact” অপশন। 

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম

অন্যদিকে আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চান সে ব্যবস্থাও আছে। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে হলে পর পর ৩ বছর শুন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করুন। উপ-কর কমিশনার বরাবর দরখাস্ত দিন। দরখাস্তটি মূলত যাবে আপনার Taxes Circle এর উপ-কর কমিশনারের কাছে। 

ইতি কথা

যাদের টিন সার্টিফিকেট নিয়ে এখনো সমস্যা আছে বা কনফিউশান আছে তারা টিন সার্টিফিকেট হেল্প লাইন অর্থ্যাৎ 09611-777111 কিংবা 333 নাম্বারে কল দিতে পারেন। আর হ্যাঁ! 

যারা ভাবছেন ফ্রিল্যান্সিং করলে ট্যাক্স দিতে হবে কিনা তাদের বলে রাখি ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সারদের ফ্রিল্যান্সিং ইনকামের উপর কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না। 

আশা করি টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই আপনার টিন সার্টিফিকেট খুব অল্প সময়ে তৈরি হয়ে যাবে। 

Code Hint: T55K459

Leave a Comment